বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশগুলোর অনেক মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবারের প্রধান অংশ রেশন থেকে পেয়ে থাকেন। কিন্তু রেশনের সাধারণ চাল পেট ভরাতে সাহায্য করলেও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না। তাই সরকার সাধারণ রেশন চালের সঙ্গে ফোর্টিফাইড বা পুষ্টিবর্ধিত চাল মেশানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই পদক্ষেপের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
১. গোপন ক্ষুধা (Hidden Hunger) রোধে
অনেক মানুষ দেখতে সুস্থ হলেও শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি থাকে, যাকে বলে গোপন ক্ষুধা। যেমন—লোহিত রক্তের অভাব (আয়রন ঘাটতি), ফোলেট, ভিটামিন বি১২, জিঙ্ক ইত্যাদি। এই ঘাটতিগুলো ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, শিশুদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
ফোর্টিফাইড চালে এসব পুষ্টি যোগ করা থাকে, ফলে রেশন চাল খেয়ে মানুষ শুধু পেটই ভরায় না—পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিও।২. সহজ ও কার্যকর পদ্ধতিতে পুষ্টি পৌঁছানো
সরকার যদি আলাদা করে ভিটামিন বা আয়রনের বড়ি দেয়, অনেকেই তা খেতে চায় না বা ভুলে যায়। কিন্তু রুটিন খাবারের (যেমন চাল) মধ্যে পুষ্টি মিশিয়ে দিলে প্রতিদিনকার খাদ্যের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে যায় সহজে ও নিরবধিতে।
৩. চালের স্বাদ, গন্ধ বা রান্নায় কোনো পরিবর্তন হয় না
ফোর্টিফাইড চাল দেখতে, রান্না করতে ও খেতে সাধারণ চালের মতোই। তাই মানুষ বুঝতেই পারে না যে তারা অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করছে। এতে মানসিক বাধাও থাকে না, ফলে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।
৪. জাতীয় পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিত পদক্ষেপ
সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG Goal 2) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা এক বড় লক্ষ্য। রেশন চালের মাধ্যমে ফোর্টিফাইড চাল সরবরাহ সেই লক্ষ্য পূরণের একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।
৫. আয়রন ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক
বিশেষ করে মহিলাদের ও শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) অনেক বেশি দেখা যায়। ফোর্টিফাইড চালে থাকা আয়রন এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ফলে স্বাস্থ্য উন্নয়ন হয়, শিশুদের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
উপসংহার
সরকার যখন সাধারণ রেশন চালের সঙ্গে ফোর্টিফাইড চাল মেশায়, তখন এর লক্ষ্য শুধুই পেট ভরানো নয়—বরং স্বাস্থ্যবান, কর্মক্ষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি সমাজ গঠন করা। এটি এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যা কম খরচে বড় পরিবর্তন আনতে পারে সমাজে।

%20(1).jpg)