টেলিকম কোম্পানির গোপন ফাঁদ যারা এসএমএস বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, তারাও কেন প্রতিমাসে টাকা দিচ্ছেন?

Life problem  Solvers Daily
By -
0

 আজকের দিনে ফোন ছাড়া আপনি কতদূর যেতে পারবেন? ইন্টারনেট ছাড়া আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো কীভাবে হবে?এ প্রশ্নগুলো এখন আমাদের জীবনের একেবারে কেন্দ্রে।

কিন্তু আরেকটা প্রশ্ন আমরা নিজেরাই নিজেকে করি না—


আমি কি সত্যিই প্রতিদিন ১০০টা এসএমএস পাঠাই?
আমার কি প্রতিদিন ১.৫ জিবি ইন্টারনেট লাগেই?

অসৎভাবে বললে আমরা সবাই জানি — উত্তরটা না। 


আপনি হয়ত এমন একজন যাঁর প্রয়োজন শুধু অল্প ডেটা আর কলের।

কিন্তু টেলিকম অপারেটর আপনাকে বিকল্প দেন না। তারা দেয় একটি বড় প্ল্যান যেখানে থাকে:
আনলিমিটেড কল (যা আপনি চান)
১.৫ জিবি দৈনিক ইন্টারনেট (যেটা আপনি ব্যবহার করেন না)
১০০ এসএমএস প্রতিদিন (যার প্রয়োজন আপনার নেই)
অর্থাৎ, আপনি আপনার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি পরিষেবা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বুঝুন

ধরুন, সুমন একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারী।
তার প্রতিদিনের দরকার:

অফিসে কিছু জরুরি WhatsApp মেসেজ

মাঝে মাঝে ইমেইল দেখা
একটু ফেসবুক
এবং খুব কম সময় YouTube
কিন্তু প্রতিমাসে সে যে রিচার্জটা করে, তাতে থাকে:
১.৫ জিবি ইন্টারনেট প্রতিদিন
১০০টি এসএমএস প্রতিদিন
আনলিমিটেড কল

হাস্যকর ব্যাপার হলো, সে নিজের পুরো মাসে ৫০০ এমবির বেশি ডেটা খরচই করে না। এসএমএস পাঠায় গড়ে বছরে একবার।
তবুও তার মাসিক খরচ ₹৩০০–₹৩৫০।

Amazon Product Banner

কি নির্মম পরিহাস, তাই না?

কিন্তু বিকল্প না থাকায়, বাধ্য হয়ে সে এই ‘বান্ডল প্যাক’ নিতে হচ্ছে — যেটি তার প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি।


এখানেই প্রকৃত সমস্যা:
একজন গ্রাহক যিনি ইন্টারনেট আর কল ছাড়া এসএমএসের ব্যবহার প্রায় নেই, তাকে কেন পুরো এসএমএস প্যাকেজের জন্য অর্থ দিতে হবে?

এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে রয়েছে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়িক কৌশলের অসঙ্গতি ও অসততা।


আপনার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সেবা কেন নিতে বাধ্য হচ্ছেন?

এর পিছনে রয়েছে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির এক নিখুঁত কৌশল

 একতরফা সিদ্ধান্ত ও বান্ডল ফাঁদ

এসএমএস ইন্টারনেট কল — সব একসঙ্গে বাঁধা। আপনি আলাদা করে কিছু নিতে পারবেন না।
পছন্দ আপনার নয়, সিদ্ধান্ত কোম্পানির।

কাস্টমাইজড প্ল্যান নেই

আমার দরকার যদি শুধু কল হয় — তার জন্য আলাদা কোনো সাশ্রয়ী প্ল্যান নেই।
অর্থাৎ আমার প্রয়োজন এর ওপর ভিত্তি করে প্ল্যান নয়, কোম্পানির লাভ বেশি হয় এমন প্ল্যানই বাজারে থাকে।



এই অবস্থা শুধু টাকায় ক্ষতি নয়, মানসিক ক্লেশও দেয়

আজকের ভালো প্ল্যান আগামী মাসে থাকবে না।
কম দামে কিছু পেলেও কিছুদিন পর বাতিল করে নতুন প্ল্যানে তুলে দেয় — যেখানে আবার এসএমএস আর অপ্রয়োজনীয় ডেটা গুঁজে দেওয়া হয়।

আপনার প্রশ্ন সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

টেলিকম একটি বিশাল ক্ষেত্র — যেখানে হাজারো কোম্পানি, কোটি কোটি গ্রাহক, আর লক্ষাধিক কর্মসংস্থান জড়িত।
একটা ছোট পরিবর্তনেই অনেক ক্ষতি বা বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘ট্রাই’ কাজ করছে, কিন্তু সময় লাগে
ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা TRAI নিয়ম তৈরি ও প্রয়োগ করে। তবে, নতুন নিয়মগুলো চালু হতে সময় লাগে অনেকবার অপারেটরের আপত্তি ও আইনি বাধা আসে।

টেলিকম কোম্পানিগুলো সরকারের জন্য রাজস্বের বড় উৎস। তাই একরকম ‘সিস্টেম’ ভাঙার আগে সরকার বহুবার ভাবে।

 গ্রাহক সচেতনতা ও দাবির অভাব
অনেক সময় গ্রাহকরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন নয়, বা প্রয়োজনে যথাযথভাবে দাবি করেন না।
সরকারও এই চাপ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

 বাজার ও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন
নতুন প্রযুক্তি ও বাজার চাহিদার কারণে নিয়ম-কানুন আপডেট রাখা কঠিন।


সরকার আছে, কিন্তু বিষয়টি অনেক বেশি জটিল, নিয়ম প্রণয়ন ও প্রয়োগে সময় লাগে, এবং অনেক পক্ষের স্বার্থ সামঞ্জস্য করতে হয়। তাই আপনি যদি গ্রাহক হিসেবে সচেতন থাকেন, সমস্যা জানিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে থাকেন, তাহলে পরিবর্তনের গতি বাড়ানো সম্ভব।

শেষ কথা

আপনার টাকায় তাদের ব্যবসা চলে। আপনি যদি কথা না বলেন, পরিবর্তন আসবে না।
টেলিকম কোম্পানিগুলো যতদিন আপনাকে শুধু “মুনাফার উৎস” হিসেবে দেখবে, ততদিন তারা আপনার প্রয়োজন নয়, নিজেদের লাভটাই আগে ভাববে।


আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা পাওয়া আপনার অধিকার। তাই জেগে উঠুন — এখনই সময়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default