আধার কার্ড অনলাইনে আপডেট করার সম্পূর্ণ গাইড
আজকের দিনে আধার কার্ড আমাদের জন্য শুধু একটা পরিচয়পত্র নয়, যেন আমাদের ডিজিটাল জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, প্যান কার্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, এমনকি ভোটার কার্ডের যাচাইকরণ—সবকিছুতেই এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
কিন্তু আমাদের অনেকেরই আধার কার্ডে নামের বানান, ঠিকানা, জন্মতারিখ কিংবা মোবাইল নম্বরের মতো জরুরি তথ্যে ভুল থেকে যায়। এই ধরনের ভুলগুলো এখন আর চিন্তার কারণ নয়, কারণ আজকাল ঘরে বসেই অনলাইনে খুব সহজেই আধার কার্ড আপডেট করে নেওয়া যায়।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা ধাপে ধাপে জেনে নেব—কীভাবে আপনি আপনার আধার কার্ডের তথ্য অনলাইনে আপডেট করবেন, কোন কোন বিষয়গুলো আপডেট করা সম্ভব, এর জন্য কী কী নথি প্রয়োজন, কোন ধরনের ভুল এড়িয়ে চলা উচিত, এবং সবশেষে ২০২৫ সালের নতুন নিয়মাবলী।
আধার কার্ড কেন আপডেট করা জরুরি?
আমাদের অনেকেরই একটা ভুল ধারণা থাকে যে, একবার আধার কার্ড তৈরি হয়ে গেলে বুঝি সেটা আর কোনোদিন পরিবর্তন করতে হয় না। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়; আধার কার্ডে থাকা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে পারে। ঠিক কোন কোন পরিস্থিতিতে আধার আপডেট করা জরুরি, আসুন দেখে নিই:
যদি আপনার মোবাইল নম্বর পাল্টে যায় এবং আপনি সেটি আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চান। স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন হলে (যেমন, চাকরি, বিয়ে বা অন্য কোনো কারণে নতুন জায়গায় চলে গেছেন)।
যদি জন্মতারিখে কোনো ভুল থাকে এবং সেটি সংশোধন করার প্রয়োজন হয়।
নামের বানানে কোনো ভুল থাকলে, সেটি ঠিক করে নেওয়া।
অনেক পুরনো ছবি বা বায়োমেট্রিক তথ্যে (যেমন আঙুলের ছাপ বা চোখের স্ক্যান) কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে।
এই ধরনের যেকোনো পরিবর্তন হলে আধার কার্ডের তথ্য হালনাগাদ করাটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আধার অনলাইনে আপডেট করার সহজ উপায়
১. প্রথমে আপনাকে UIDAI-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এই ঠিকানাটি হলো: https://myaadhaar.uidai.gov.in
২. এরপর "লগইন" অপশনটিতে ক্লিক করুন। আপনার আধার নম্বর এবং মোবাইলে আসা ওটিপি ব্যবহার করে সিস্টেমে প্রবেশ করুন।
৩. লগইন করার পর, "আধার আপডেট" অংশটি বেছে নিতে হবে। এখানে "ব্যক্তিগত তথ্যের পরিবর্তন" অথবা "ঠিকানা পরিবর্তন" অপশনগুলির মধ্যে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি নির্বাচন করুন।
৪. এবার আপনি যে তথ্যগুলো পরিবর্তন করতে চাইছেন—যেমন নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, ইমেল আইডি কিংবা মোবাইল নম্বর—সেগুলো নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।
৫. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে পিডিএফ অথবা জেপিজি ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে। নিশ্চিত করুন যেন আপলোড করা ডকুমেন্টগুলো স্পষ্ট এবং সঠিক হয়।
৬. তথ্য আপডেটের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়। বর্তমানে নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
৭. সব ধাপ শেষ হলে আপনার আবেদনটি জমা দিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি সার্ভিস রিকোয়েস্ট নম্বর (এসআরএন) পাবেন। এই নম্বরটি অবশ্যই যত্ন করে রাখুন, কারণ এটি দিয়ে আপনি আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা ট্র্যাক করতে পারবেন।
আপডেট করানোর জন্য কিছু জরুরি কাগজপত্র দরকার হতে পারে। আপনার আপডেটের ধরন অনুযায়ী এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি নথি জমা দিতে হতে পারে:
* ভোটার আইডি কার্ড
* পাসপোর্ট
* প্যান কার্ড
* ড্রাইভিং লাইসেন্স
* ঠিকানা প্রমাণের জন্য গ্যাস অথবা বিদ্যুৎ বিল
আরও বিস্তারিতভাবে অনুমোদিত সমস্ত নথির তালিকা দেখতে, অনুগ্রহ করে এই ঠিকানায় যান: https://uidai.gov.in
আধার আপডেট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
আধার আপডেটের সময় তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, কারণ ভুল তথ্য দিলে কিন্তু আপনার আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে।
অপ্রাসঙ্গিক বা অস্পষ্ট কোনো নথি আপলোড করবেন না – এতে আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটা অযথা জটিল হবে।
আপনার ওটিপি (OTP) কোনো অবস্থাতেই কারও সাথে শেয়ার করবেন না। এটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য।
আধার আপডেটের জন্য আবেদন করার সময় শুধু UIDAI-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা তাদের অনুমোদিত কেন্দ্রগুলিকেই ভরসা করুন।
ভুয়ো এজেন্ট বা সন্দেহজনক কোনো অ্যাপের ফাঁদে পা দেবেন না; মনে রাখবেন, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সেখানে মোটেও সুরক্ষিত নয়।
২০২৫ সালের জন্য কিছু নতুন নিয়মাবলী: গুরুত্বপূর্ণ আপডেট
এখন থেকে নাম কিংবা জন্মতারিখ চাইলেই বারবার বদলানো যাবে না, কারণ এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ঠিকানার তথ্য বিনামূল্যে আপডেট করার সুযোগ কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই মিলবে।
যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও নিখুঁত করতে UIDAI এখন অত্যাধুনিক ফেসিয়াল রিকগনিশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
নিজের মোবাইল নম্বর পাল্টাতে হলে এখন থেকে অফলাইন বায়োমেট্রিক যাচাই বাধ্যতামূলক।
আধার কার্ডকে আমরা অনেকে স্রেফ একটা পরিচয়পত্র ভাবি, কিন্তু আসলে এটা আপনার ডিজিটাল দুনিয়ার পরিচয়ের একটা মস্ত বড় ভিত্তি। যদিও অনলাইনে আধার কার্ড আপডেট করার কাজটা এখন বেশ সহজ হয়ে গেছে, তবুও একটা কথা মাথায় রাখা খুব দরকার—একেবারে সতর্কভাবে আর সব সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে। নাহলে সামান্য একটা ভুলের জন্যও আপনার যাবতীয় সরকারি কাজকর্মে অযথা ভোগান্তি আসতে পারে। তাই যদি আপনার আধার কার্ডে কোনো তথ্য বদলানোর দরকার হয়, তাহলে আর দেরি না করে আজই নিজের ঘরে বসে myaadhaar.uidai.gov.in এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনটা সেরে ফেলুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
প্রশ্ন: মোবাইলের নম্বর কি অনলাইনে পাল্টানো যাবে?
উত্তর: না, এই মুহূর্তে সেই সুবিধা নেই। মোবাইল নম্বর বদলাতে হলে আপনার কাছের কোনো আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারে যেতে হবে।
প্রশ্ন: তথ্য আপডেট হওয়ার পর নতুন আধার কার্ড পেতে কতদিন লাগতে পারে?
উত্তর: সাধারণত, আপনার দেওয়া তথ্যগুলো অনলাইনে আপডেট হতে ৫ থেকে ১০টা কর্মদিবস মতো সময় লাগে। একবার আপডেট হয়ে গেলে, আপনি অনায়াসেই নতুন আধার কার্ডের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
প্রশ্ন: কতবার নিজের তথ্য বদলানো যাবে?
উত্তর: কিছু তথ্য, যেমন নাম বা জন্মতারিখ, বদলানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিয়েছে। সাধারণত, নাম একবার এবং জন্মতারিখ দু'বার পর্যন্ত পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে।
