সমস্যা—শব্দটা ছোট, কিন্তু তার ভার অনেক।
একটা মেয়ে দিনের পর দিন সমাজের চোখে 'নাজুক' হয়ে উঠতে শেখে, আর একটা ছেলে—তার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় 'মজবুত' হয়ে থাকার দায়িত্ব। কিন্তু কি মেয়ের, কি ছেলের—উভয়েরই জীবনে সমস্যা আছে, কষ্ট আছে, অভিমান আছে। শুধু প্রকাশের ভাষা আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিটা আলাদা।
👦 ছেলেদের সমস্যা:
১. “তুই তো ছেলে”—এই বাক্যটাই চাপের উৎস
ছেলেরা কাঁদবে না, দুর্বল হবে না, চাকরি পাবেই—এই প্রত্যাশাগুলো ওদের জীবনকে এক অদৃশ্য খাঁচায় পুরে দেয়।
২. চাকরি না পেলে যোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়
একজন বেকার ছেলে মানেই 'ফেল'—সমাজ, পরিবার এমনকি নিজেকেও সে আর সম্মান দিতে পারে না।
৩. নিজের আবেগ দেখানোর সুযোগ নেই
ছেলেরা কাঁদলে বলে ‘ন্যাকামো’, মন খারাপ করলে বলে ‘ডিপ্রেশন দেখাচ্ছে’। অথচ ভেতরে সে হয়তো ভেঙে পড়ছে।
৪. সম্পর্কে চাওয়া-পাওয়া অসমান
প্রেম বা সংসারে একটা ছেলে যেন 'অটো ATM' হয়ে দাঁড়ায়, অথচ তার ভালোবাসা, যত্ন কিংবা আবেগকে কেউ পাত্তা দেয় না।
👧 মেয়েদের সমস্যা:
১. নিয়ম, নিষেধ আর নিরাপত্তাহীনতা
মেয়েরা কোথাও বেরোলে কিসে পরেছে, কার সঙ্গে গেছে, কখন ফিরবে—এই প্রশ্নগুলোর জবাব যেন সারাক্ষণ দিতে হয়।
২. দেহ নয়, মন বোঝার অভাব
একজন মেয়ের সৌন্দর্য, গায়ের রঙ, গঠন—এসব নিয়েই সবার আগ্রহ। কিন্তু তার স্বপ্ন, চিন্তা, কষ্টগুলোকে খুব কম মানুষ বুঝতে চায়।
৩. পরিবারে দায়িত্ব, কিন্তু অধিকার নেই
‘মেয়ে মানেই দায়িত্বশীল’—এই ভাবনার মধ্যে মেয়েরা বড় হয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারে এখনও অনেক সময়েই পিছিয়ে থাকে।
৪. মাসিক, মাতৃত্ব ও সমাজ
মেয়েরা নিজের শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলতে পারে না। আবার মা হওয়া বা না হওয়া—দুটোই যেন বিচার্য হয়।
⚖️ তাহলে কার সমস্যা বেশি?
এটা কোনো প্রতিযোগিতা নয়। আসল প্রশ্ন হলো—আমরা একে অপরের সমস্যাকে কতটা বুঝতে শিখছি?
ছেলেরা যদি মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা বোঝে, আর মেয়েরা যদি ছেলেদের চাপটাও দেখে—তবে বুঝতে পারব, সমস্যা দু’পক্ষেই আছে।
সমাধান একটাই—সহানুভূতি। আমরা যদি একে অন্যের কাঁধে হাত রাখি, তাহলে হয়তো এই জীবনটা একটু সহজ হবে, একটু বেশি মানবিক হবে।
💬 উপসংহার:
ছেলে-মেয়ে নয়, আমরা আগে মানুষ। মানুষ হিসেবে অনুভব করি, ভুল করি, স্বপ্ন দেখি, ভালোবাসি—এটাই সত্যি। সমাজ যদি এই মানবিকতার চোখে দেখে, তবে হয়তো একদিন "ছেলেদের সমস্যা বনাম মেয়েদের সমস্যা" বলার বদলে আমরা বলব—"আমাদের সমস্যা"।
