বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি ওয়েবসাইট কেবলমাত্র অনলাইন উপস্থিতির প্রতীক নয়, বরং এটি আপনার ভাবনা, ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের একটি শক্তিশালী পরিচয়। অনেকেই শুরুতে খরচ কমাতে গিয়ে ফ্রি ডোমেইনের দিকে ঝুঁকে পড়েন — যা প্রথমে লাভজনক ও সুবিধাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই সিদ্ধান্তটি আপনার অনলাইন ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ফ্রি ডোমেইন কী?
ফ্রি ডোমেইন বলতে এমন ওয়েব ঠিকানাকে বোঝানো হয়, যা কোনো খরচ ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। সাধারণত .tk, .ml, .cf, .gq, .ga, .xyz প্রভৃতি এক্সটেনশন যুক্ত ডোমেইন কিছু নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে পাওয়া যায়, যেমন Freenom বা কিছু ফ্রি হোস্টিং পরিষেবা। তবে এইসব ডোমেইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক গোপন শর্ত থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ওঠে — কিন্তু তখন ক্ষতি ইতিমধ্যেই ঘটে যায়।
ফ্রি ডোমেইনের ৭টি ভয়ংকর ঝুঁকি
১. প্রকৃত মালিকানা আপনার নয়
ফ্রি ডোমেইনের আইনগত মালিকানা আপনার থাকে না। আপনি শুধু এটি ব্যবহার করার অনুমতি পান। প্রোভাইডার যেকোনো সময় তা বাতিল করতে পারে, ব্লক করতে পারে বা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারে — কোনো সতর্কতা ছাড়াই। এর ফলে আপনার সাইট, কন্টেন্ট, SEO, ট্রাফিক সব হারিয়ে যেতে পারে এক মুহূর্তে।

২. SEO র্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব
Google, Bing-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো ফ্রি ডোমেইনের ওপর আস্থা রাখে না। কারণ, এই ধরনের ডোমেইন বহু স্প্যাম বা ভুয়া সাইট ব্যবহার করে থাকে। ফলস্বরূপ, আপনার সাইটের কনটেন্ট যত ভালোই হোক না কেন, সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং হবে খুব নিচে।
৩. ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ফ্রি ডোমেইন সাধারণত অপেশাদার মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, yourbusiness.tk টাইপের ঠিকানায় অনেক ব্যবহারকারী সন্দেহ প্রকাশ করে, ভাবেন এটি হয়তো ভুয়া বা অনিরাপদ সাইট। পেশাদার ইমেজ গড়তে চাইলে এই ধরনের ডোমেইন আপনার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
৪. কাস্টম ইমেইলের অভাব
ফ্রি ডোমেইনে প্রফেশনাল ইমেইল যেমন info@yourdomain.com তৈরি করা সম্ভব হয় না বা তা শুধু পেইড সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে চালু করা যায়। এর ফলে গ্রাহক বা কর্পোরেট যোগাযোগে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।
৫. সহজেই ব্ল্যাকলিস্টেড হওয়ার ঝুঁকি
অনেক ISP বা ব্রাউজার ফ্রি ডোমেইন এক্সটেনশন যুক্ত সাইটকে ব্লক করে দেয় বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে ব্যবহারকারী হয়তো আপনার সাইটে প্রবেশই করতে পারবে না।
৬. অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপন ও রিডাইরেকশন
বেশ কিছু ফ্রি ডোমেইন প্রোভাইডার অজান্তেই আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন বসিয়ে দেয় অথবা ব্যবহারকারীকে অন্য ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করে। এতে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা মারাত্মকভাবে খারাপ হয় এবং আপনার সাইটের প্রতি তাদের আস্থা একেবারে কমে যায়।
৭. সিকিউরিটি ও কাস্টমার সাপোর্টের অভাব
ফ্রি ডোমেইনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় কোনো কার্যকর কাস্টমার সাপোর্ট পাওয়া যায় না। যদি SSL সমস্যা, DNS কনফিগারেশন, কিংবা সাইট হ্যাকিংয়ের মতো বড় সমস্যা হয়, তবে সমাধান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তাহলে কী করা উচিত?
সরাসরি ও নিরাপদ সমাধান হলো — স্বল্প মূল্যে একটি পেইড ডোমেইন কেনা। আজকাল .com, .xyz, .shop, .in, .online প্রভৃতি ডোমেইন অনেক সময় অফারে মাত্র ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
পেইড ডোমেইনের সুবিধা:
-
আপনি হবেন ডোমেইনের একমাত্র ও সম্পূর্ণ মালিক
-
সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং হবে অনেক ভালো
-
প্রফেশনাল কাস্টম ইমেইল তৈরি করা যাবে
-
ব্র্যান্ড ইমেজ হবে বিশ্বাসযোগ্য ও পেশাদার
-
SSL, DNS, হোস্টিংসহ সব বিষয়েই সাপোর্ট পাবেন
-
কোনো বিজ্ঞাপন বা রিডাইরেক্ট ঝামেলা থাকবে না
ফ্রি ডোমেইন দিয়ে ওয়েবসাইট শুরু করাটা যেমন সহজ ও আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, ঠিক তেমনই তা একটি ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে। যদি আপনি ওয়েবসাইটকে ভবিষ্যতের একটি স্থায়ী মাধ্যম হিসেবে দেখতে চান — তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে একটি পেইড ডোমেইনে বিনিয়োগ করা। শুরুতেই একটু খরচ করলেও, তা ভবিষ্যতে আপনার ব্র্যান্ড, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সফলতার ভিত্তি তৈরি করে দেবে।
