সরকারি ওয়েবসাইট ধীরগতিতে চলে কেন?

Life problem  Solvers Daily
By -
0

ভারতের সরকারি ওয়েবসাইটগুলো এত ধীরে চলে কেন?

ভারত ধীরে ধীরে তার ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া, ই-গভর্ন্যান্স—এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সরকার চেষ্টা করছে মানুষ যেন ঘরে বসেই সরকারি সেবা পেতে পারে। এখন অনেক কাজ অনলাইনে সম্ভব। জন্মনিবন্ধন, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, জমির কাগজ, পাসপোর্ট আবেদন, এমনকি চাকরির ফর্ম—all online.

তবে বাস্তবে অভিজ্ঞতা অনেক সময় ঠিক উল্টো। ওয়েবসাইট খুলতেই সময় লাগে। মাঝপথে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও কাজ করতে পারে না। এতে সাধারণ মানুষ শুধু বিরক্তই নয়, অনেক সময় ক্ষতির মুখেও পড়ে।


এই ধীরগতির পেছনে বেশ কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে।

অনেক সরকারি ওয়েবসাইট এখনো পুরনো ধাঁচে তৈরি, পুরনো সার্ভারে চলছে। যেখানে আজকের আধুনিক প্রাইভেট সাইটগুলো ক্লাউড সার্ভার, দ্রুতগতির সফটওয়্যার আর মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইনে তৈরি হয়, সেখানে অনেক সরকারি সাইট এখনো সেই পুরনো কাঠামোর মধ্যেই আটকে আছে। ফলে একটু বেশি মানুষ একসাথে ঢুকলেই সাইট হ্যাং হয়ে যায়, বা একদমই কাজ করে না।

যখন কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে কোনো সরকারি সাইটে ঢোকে, যেমন রেজাল্ট দেখার দিন বা কোনও প্রকল্পে নাম লেখানোর সময়, তখন সার্ভারের ওপর বিশাল চাপ পড়ে। বেশিরভাগ সরকারি সার্ভার এতটা চাপ নিতে পারে না।

অনেক সাইট একবার তৈরি করার পর বছর পার হয়ে যায়, কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বা আপডেট হয় না। ফলে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। নতুন ব্রাউজার, নতুন ফোন—এসবের সঙ্গে সাইটগুলো অনেক সময়ই ঠিকভাবে কাজ করে না।

সরকারি সাইটগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। লগইন, ওটিপি, ক্যাপচার—এসব নিরাপত্তার জন্য ভালো, কিন্তু যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে তা হয় বিরক্তির কারণ।

আরও একটি বড় সমস্যা হলো বাজেট ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধীরগতি। অনেক সময় প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রস্তাব গেলেও তা অনুমোদন পেতে দেরি হয়, ফলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সময় লেগে যায়।


সবচেয়ে বড় কথা, অনেক সরকারি সাইট তৈরি হয় সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা না ভেবে। কোথায় ক্লিক করতে হবে, কীভাবে ফর্ম পূরণ করতে হবে—এসব বোঝাই যায় না। একটি দরকারি তথ্য পেতে অনেকগুলো পৃষ্ঠা ঘুরে ঘুরে খুঁজতে হয়।

এই সমস্যাগুলো যদি আমরা বুঝতে পারি, তবে সমাধানও সম্ভব। দক্ষ প্রযুক্তি দল, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, আর ব্যবহারকারী-বান্ধব ডিজাইন—এই চারটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে সরকারি সাইটগুলো অনেক সহজ ও দ্রুতগামী হয়ে উঠতে পারে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন তখনই সফল হবে, যখন দেশের প্রতিটি মানুষ নিজে থেকে সহজে, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নিরাপদে সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default