নতুন আইন: প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫
২০২৫ সালের ২১ আগস্ট, ভারতীয় সংসদ “প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫” পাস করেছে, যা দেশের সকল টাকা-ভিত্তিক অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করার দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এই বিল মূলত জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অ্যাপ যেমন ড্রিম১১, মোবাইল প্রিমিয়ার লিগ (MPL) এবং জুপির মতো প্ল্যাটফর্মকে লক্ষ্য করেছে। নতুন আইন অনুযায়ী কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইন টাকা খেলার গেম অফার, প্রচার বা সহজলভ্য করতে পারবে না। আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল এবং বড় অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া, এই ধরনের গেমের বিজ্ঞাপন ও আর্থিক লেনদেনও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
ইন্ডাস্ট্রিতে তাত্ক্ষণিক প্রভাব
বিল পাসের পরেই উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের সমস্ত পেইড গেম সাসপেন্ড করেছে। ড্রিম১১-এর বাজার মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার এবং MPL-এর প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। এই সংস্থাগুলো এখন বিকল্প আয় উপায় খুঁজছে এবং আইনি পথ অনুসন্ধান করছে। এদিকে, নাজারা টেক ও ডেলটা কর্পের মতো গেমিং সংস্থার শেয়ারের মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পদক্ষেপ $৩.৮ বিলিয়ন মূল্যের অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে বড় প্রভাব ফেলবে এবং লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী, কর্মী ও ব্যবসায়িক অংশীদারের জীবিকা প্রভাবিত করবে।
সরকারের কারণ ও উদ্দেশ্য
ভারত সরকার এই পদক্ষেপের পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমত, অনলাইন গেম আসক্তি এবং আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি গুরুতর। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের গেমের সঙ্গে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস অর্থায়ন এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপের সম্পর্ক থাকতে পারে। সরকার জানিয়েছে, প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে বার্ষিক প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, অনলাইন গেম আসক্তি মাদকাসক্তির সমতুল্য ক্ষতিকর হতে পারে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি ন্যাশনাল অনলাইন গেমিং কমিশন গঠন করা হবে যা ই-স্পোর্টস এবং সামাজিক গেমিংকে নিয়ন্ত্রিত ও উৎসাহিত করবে।
আইনি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
এই বিলের কারণে অনলাইন গেমিং সংস্থা ও ব্যবহারকারীরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ব্যবসায়িক দিক থেকে এটি বৈদেশিক বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সংস্থা নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও বিকল্প আয়ের পথ অনুসন্ধান করবে। ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা যে অনলাইন টাকা খেলার গেম থেকে দূরে থাকা উচিত।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিল এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গেমিং সংস্থাগুলো নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অভিযোজিত হতে পারে। সরকারের লক্ষ্য হলো দায়িত্বশীল গেমিং প্রচার করা এবং কৌশলপূর্ণ গেম ও সুযোগ-ভিত্তিক গেমের মধ্যে পার্থক্য স্থাপন করা। এটি ই-স্পোর্টস, সামাজিক গেমিং এবং বিনোদনমূলক গেমের জন্য নতুন নিয়ন্ত্রণ এবং সুযোগ তৈরি করবে।
সুত্র:
