বায়ু দূষণ: কার দোষ, কার শাস্তি?
নিত্য দিনের ঘটনা কোন না কোন মানুষের সাথে ঘটে বাইক নিয়ে রাস্তায় নামলেই। হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামিয়ে দিয়ে। কাগজপত্র ঠিক আছে, তবুও গাড়ির ধোঁয়ার অজুহাতে বড়সড় ফাইন ধরিয়ে দিল। মানুষটি মাথা নীচু করে টাকা দিয়ে দিলেন—কারণ তার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—একজন সাধারণ মানুষের বাইক থেকে বের হওয়া ধোঁয়া কি এতটাই ভয়ংকর, যতটা ভয়ংকর প্রতিদিন শহরের আকাশ ঢেকে ফেলা কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া?
সরকারের দ্বিমুখী চোখ
সাধারণ নাগরিকের বাইকে ধোঁয়া মানেই অপরাধ, কিন্তু কারখানার চিমনি থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে সরকার যেন অন্ধ।
গরিব চালকের ভাঙা ভ্যান বা পুরোনো গাড়িতে ফাইন, অথচ কোটি টাকার ফ্যাক্টরি কোনো শাস্তি ছাড়াই আকাশে বিষ ঢালছে।নদীতে মাছ মরছে, জলের রং বদলাচ্ছে, গ্রাম্য কৃষক তার জমিতে সেই দূষিত জল ব্যবহার করে ফসল তুলতে বাধ্য হচ্ছে—কিন্তু সরকারের নীরবতা অটল।
এ যেন আইন শুধু দুর্বলদের জন্য, শক্তিশালীরা সবসময় রক্ষা পায়।
মানুষের যন্ত্রণা: নীরব কান্না
আজ শহরের প্রতিটি স্কুলের বাচ্চা কাশতে কাশতে ক্লাসে যায়।
প্রতিটি হাসপাতালের ওয়ার্ড ভর্তি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বৃদ্ধে।
যুবকেরা অকালে ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তবুও সরকার বলছে—“আমরা পরিবেশ বাঁচাতে কাজ করছি।”
কিন্তু সত্যি কি তাই?
ন্যায়ের প্রশ্ন
পরিবেশ রক্ষার নামে কেবল সাধারণ মানুষকে ফাইন করা কি আসল সমাধান?
যদি সরকার সত্যিই পরিবেশ রক্ষা করতে চায়—
তবে কেন শিল্পকারখানায় বাধ্যতামূলক ফিল্টার বসানো হয় না?
কেন নদীতে বিষাক্ত জল ঢালার জন্য কোটি টাকার জরিমানা ধার্য করা হয় না?কেন কারখানার মালিকরা সহজেই সব নিয়ম ভেঙে পার পেয়ে যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর চায় প্রতিটি শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশু, প্রতিটি অসহায় বৃদ্ধ, প্রতিটি সচেতন নাগরিক।
নিঃশ্বাস কার অধিকার?
বায়ু দূষণ আজ কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।
যদি আইন কেবল গরিবের জন্য হয়, তবে সেই আইন ন্যায় নয়—এটি অন্যায়।
যদি শাস্তি কেবল সাধারণ মানুষের জন্য হয়, তবে প্রকৃত অপরাধীরা সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।
নিঃশ্বাসের অধিকার সবার—গরিব হোক বা ধনী।
সরকার যদি সত্যিই পরিবেশ বাঁচাতে চায়, তবে আগে বড় বড় শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্যথায়, আমরা প্রতিদিন ফাইন দিয়ে গরিব হব, আর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া দিয়ে ধীরে ধীরে মারা যাব।

