বর্তমান সময়ে তথ্যের নির্ভুলতা ও সত্যতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেই তথ্যের যথাযথ যাচাই ও মূল্যায়ন। ডিজিটাল যুগে একটি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে, এবং সাধারণ মানুষ সেই তথ্যের সত্যতা যাচাই না করেই বিশ্বাস করে বসে। সম্প্রতি এমনই একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে—যেখানে কিছু অসাধু ব্যক্তি মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে যে, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় প্রশাসন নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে।
এই ধরনের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিমূলক। বাস্তব চিত্র হলো, নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র ও সংবিধান-নির্ধারিত সংস্থা হিসেবে কাজ করে, এবং এর কার্যপ্রণালীতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই। ভোটার তালিকা সংশোধন বা নাম বাদ পড়ার মতো ঘটনা স্বাভাবিকভাবে হতে পারে যদি কেউ দীর্ঘদিন ভোটার তালিকা আপডেট না করে থাকেন, ঠিকানা পরিবর্তন করেন, অথবা KYC সংক্রান্ত অনিয়ম থাকে। তবে এসবই নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমাধানযোগ্য।
এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের পিছনে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য একটাই—মানুষের মনে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করা। সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া এসব গুজব সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে তোলে, এবং অনেক সময় তারা তাদের ভোটাধিকার হারানোর ভয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই আমাদের দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে, এসব গুজবকে বিশ্বাস না করা এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে সরাসরি https://voterportal.eci.gov.in অথবা স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা। সচেতন নাগরিক হিসেবে গুজবের মোকাবিলা করাই আমাদের কর্তব্য।
কীভাবে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি
এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু অনির্ভরযোগ্য চ্যানেলের মাধ্যমে। মানুষকে বলা হচ্ছে, তাদের ভোটাধিকার বাতিল হয়ে গেছে বা খুব শিগগিরই হয়ে যাবে।
এই ধরনের ভুয়া প্রচারণা শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করে না, গণতন্ত্রকেও দুর্বল করে।
এই বিভ্রান্তির উদ্দেশ্য কী
ভোটের দিন সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করা
নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করারাজনৈতিকভাবে জনমত প্রভাবিত করা
বাস্তব তথ্য কী বলছে
ভারতের নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম কাটা হয় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ও বৈধ কারণে—যেমন মৃত্যুবরণ, স্থায়ীভাবে অন্যত্র স্থানান্তর, বা ভুল তথ্য প্রদান। এবং এই প্রক্রিয়া একটি নিরীক্ষিত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
সরকার বা নির্বাচন কমিশন কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে তালিকা থেকে বাদ দেয় না।
আপনি কীভাবে নিজেকে সচেতন রাখতে পারেন
১. নিজের ভোটার তথ্য যাচাই করুন
সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার ভোটার তথ্য যাচাই করুন:
https://voterportal.eci.gov.in
২. গুজব ছড়ালে রিপোর্ট করুন
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়ায়, তা হলে তা স্থানীয় প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশনে জানান।
৩. যাচাই না করে কোনো তথ্য বিশ্বাস করবেন না
শুধু সরকারি ও বিশ্বস্ত সংবাদ মাধ্যম থেকেই তথ্য সংগ্রহ করুন।
সরকারের করণীয়
জাতীয় পর্যায়ে তথ্য সচেতনতা কর্মসূচি চালু করাভুয়া তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া
ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মিডিয়া ও সম্প্রচার ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার
উপসংহার
গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো সচেতন নাগরিক। বিভ্রান্তিকর বার্তার শিকার হলে শুধু নিজের অধিকারই হারাই না, বরং গণতন্ত্রকেও দুর্বল করে তুলি। তাই গুজব নয়, তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন, নিজের ভোটার তথ্য নিজেই পরীক্ষা করুন এবং অন্যকেও সচেতন করুন।
পরামর্শ: যদি আপনার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকে, আপনি ফর্ম-৬ পূরণ করে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। বিস্তারিত তথ্য পেতে আপনার নিকটবর্তী বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করুন।

.jpeg)