বর্তমানে ডিজিটাল জগতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। এই প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন মানুষের ভাব প্রকাশের সুযোগ করে দেয়, তেমনি এর মাধ্যমে বিভিন্ন অবাঞ্ছিত কনটেন্টও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামের নগ্নতা ও অশ্লীলতা নিয়ে এখন উদ্বেগ ব্যাপক হারে বাড়ছে। অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করছেন যে ইনস্টাগ্রামে নগ্ন ছবি, আপত্তিকর ভিডিও, এমনকি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ প্রোফাইল খোলামেলা ভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যান করা, নতুন নির্দেশিকা জারি করা এবং কনটেন্ট মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা অন্যতম।
ইনস্টাগ্রামে নগ্নতা কীভাবে ছড়াচ্ছে?
অনেক সময় ব্যবহারকারীরা নাম-পরিচয় গোপন রেখে এমন প্রোফাইল তৈরি করছে, যেখানে নগ্ন বা যৌন উদ্দীপক ছবি/ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইনস্টাগ্রামের রিলস ফিচার এখন অনেকের জন্য কনটেন্ট শেয়ারিংয়ের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে এই ফিচারের অপব্যবহারও দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে অনেক ব্যবহারকারী ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ পোশাক, অশ্লীল ভঙ্গিমা কিংবা বর্ণনামূলক ক্যাপশন ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করছে, যেগুলো ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদম দ্বারা অটো-রেকমেন্ডেশনের মাধ্যমে অধিকসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এই ধরনের কনটেন্ট বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানসিকতা ও আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রিলসের সহজ সম্পাদনা, ফিল্টার, ট্রেন্ড ও মিউজিক ফিচার অনেককে অল্প সময়ে বেশি ফলোয়ার পাওয়ার মোহে অশ্লীলতাকে কৌশলে ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করছে। এর ফলে সমাজে এক ধরনের “ভিউসের জন্য কিছুই করতে পারি” মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, যা মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
অনেক "ইনফ্লুয়েন্সার" মাত্রাতিরিক্ত ফলোয়ার বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে অর্ধনগ্ন বা অশালীন পোশাকে ভিডিও বানাচ্ছে।
ইনস্টাগ্রামে প্রোফাইল বায়োতে এমন অনেক ওয়েবসাইট বা টেলিগ্রাম চ্যানেলের লিংক দেওয়া হয় যা ব্যবহারকারীকে অন্য একটি অশ্লীল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যায়।
ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ
২০২১ সালে ভারতের ডিজিটাল নীতিতে বড় পরিবর্তন আসে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়। এই নতুন নীতিমালায় সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কনটেন্টের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়ানো হয়। এতে বলা হয়, যেসব প্ল্যাটফর্ম ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করে, তাদের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই নীতির অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইন্টারনেট জগতে অশ্লীলতা, ভুয়া তথ্য এবং অপসংস্কৃতির প্রসার রোধ করা। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে নগ্নতা ও বেলাগাম কনটেন্টের বৃদ্ধি সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।
Meta (Instagram-এর মালিকানাধীন) এখন ভারত সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, উগ্র বা অশ্লীল কনটেন্ট চিহ্নিত করতে AI ব্যবহার করছে। ব্যবহারকারীরা রিপোর্ট করলেই কনটেন্ট দ্রুত রিভিউ হয়।
সরকার cybercrime.gov.in ও 1930 নাম্বারে রিপোর্ট করার সুবিধা চালু করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা নগ্ন বা যৌন হ্যারাসমেন্ট সংক্রান্ত কনটেন্ট দ্রুত রিপোর্ট করতে পারেন।
অসামাজিক ও পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে কিছু নির্দিষ্ট ওটিটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ সাময়িকভাবে ব্লক করা হয়েছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের নির্দেশ
ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট কনটেন্ট ব্লক করতে, যেমন অশ্লীল সাইটে রিডাইরেক্ট করে এমন লিংক, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম বায়োতে থাকা লিংক।
কীভাবে ব্যবহারকারীরা সতর্ক থাকবেন?
ইনস্টাগ্রামে Report" অপশনের মাধ্যমে অশ্লীল প্রোফাইল দররুত রিপোর্ট করুন।
নিজের অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করুন, অজানা লোকদের ফলো রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করুন।ইনস্টাগ্রামে অনেক প্রোফাইলে এমন লিংক থাকে যা ব্যবহারকারীকে টেলিগ্রাম বা অন্য পর্ন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে পারে।
অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা এবং বয়স উপযোগী কনটেন্ট নিশ্চিত করা।
টেলিগ্রাম বর্তমানে অনেক অশালীন কনটেন্টের হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যেগুলো ইনস্টাগ্রাম বায়ো বা ডিএম-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে সরকারের নজর টেলিগ্রামেও পড়েছে এবং কিছু চ্যানেল ইতোমধ্যে রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্লক হয়েছে।
ইনস্টাগ্রামের মত শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যদি অশ্লীল কনটেন্ট ছড়াতে থাকে, তবে এটি কেবল সামাজিক ব্যাধিই নয় বরং আইনত অপরাধও। সরকার এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু সচেতনতা ও ব্যবহারকারীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা সবাই যদি সচেতন হই, রিপোর্ট করি এবং আইন মেনে চলি, তবে একটি সুস্থ ডিজিটাল সমাজ গঠন সম্ভব।
