রাতের অন্ধকারে একা বসে মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলছে। হয়তো পাশের ঘরে বাবা-মা ঘুমিয়ে, আর ছোট ভাই পড়াশোনা করছে। সেই স্ক্রিনে চলছে নতুন এক ওয়েব সিরিজ—কাহিনি ভালো, অভিনয় ভালো, কিন্তু হঠাৎ এমন এক দৃশ্য আসে যা পরিবারের সামনে বসে দেখা সম্ভবই নয়। এটাই আজকের বহু OTT প্ল্যাটফর্মের বাস্তবতা।
এই পথে কেন হাঁটছে তারা?
OTT শুরু হয়েছিল স্বাধীন গল্প বলার স্বপ্ন নিয়ে। সেন্সরের বাঁধন ছিঁড়ে সৃষ্টির মুক্ত বাতাস বইবে—এমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আজ সেই স্বাধীনতাকে অনেকেই ব্যবসার অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে।
-
চটকদার বাজার – সাহসী দৃশ্য যোগ করলে ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, মিডিয়া আলোচনায় আসে, আর সাবস্ক্রিপশনও বাড়ে।
-
আইনের ফাঁকফোকর – অনেক দিন ধরে এদের উপর সিনেমার মতো সেন্সর বোর্ডের নিয়ম ছিল না, তাই যা ইচ্ছে দেখানো সহজ হয়ে গিয়েছিল।
-
কৌতূহলের খোরাক – প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্টের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহলকে তারা টাকার যন্ত্র বানিয়েছে।
আমাদের সমাজে এর প্রভাব
একটা সময় ছিল, নাটক বা সিনেমা মানেই পরিবার মিলে দেখা। আজ সেই সংস্কৃতি ভেঙে যাচ্ছে।
-
তরুণদের মনে অকাল যৌন কল্পনা ঢুকে পড়ছে।
-
সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে—ভালোবাসার মানে যেন শুধু শারীরিক হয়ে যাচ্ছে।
-
আসল শিল্পের জায়গায় ক্রমে আসছে সস্তা উত্তেজনা।
সরকারের অবস্থান
ভারত সরকারও বুঝেছে, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই মাধ্যম সমাজের ক্ষতি করতে পারে। তাই ২০২১ সালে নতুন আইটি নীতিমালায় OTT প্ল্যাটফর্মকে কন্টেন্টের শ্রেণিবিন্যাস (U, U/A 13+, U/A 16+, A) দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এছাড়া দর্শকের অভিযোগ জানানোর সুযোগ, আপত্তিকর কন্টেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ, এবং আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত হয়েছে।
তবে সত্যি কথা হলো—নিয়ম আছে ঠিকই, কিন্তু নিয়ম মানানোই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে এখনও শিল্পের আড়ালে অশ্লীলতা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের করণীয়
সরকার একা কিছু করতে পারবে না। দর্শক হিসেবে আমাদেরও সচেতন হতে হবে।
-
সাবস্ক্রিপশন দেওয়ার আগে কন্টেন্টের মান যাচাই করা উচিত।
-
আপত্তিকর কন্টেন্ট দেখলে অভিযোগ জানানো প্রয়োজন।
-
সৃষ্টিশীল কাহিনি ও ভালো মানের শিল্পকে সমর্থন করতে হবে।
শেষ কথা
OTT প্ল্যাটফর্ম হতে পারে সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত—যদি তারা দায়িত্ব বোঝে। কিন্তু যদি শুধু লাভের জন্য দর্শকের আবেগ আর কৌতূহলকে শোষণ করে, তবে সেই স্বাধীনতা একদিন অভিশাপে পরিণত হবে।
আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি নীরব দর্শক হয়ে থাকব, নাকি এই অশ্লীলতার বন্যার সামনে দাঁড়াব?
